সেক্সোয়াল হেলথ

ইমিউন সিস্টেম কিভাবে কাজ করে?

প্রতি সেকেন্ডে কোটিকোটি জীবাণু যেমন ভাইরাস/ব্যাকটেরিয়া/ছত্রাক আপনাকে-আমাকে আক্রমণের জন্য ওত পেতে থাকে। এদের আক্রমণ থেকে বাঁচার জন্য আমাদেরও রয়েছে স্মার্টেষ্ট ডিফেন্স সিস্টেম বা প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা। এই ডিফেন্স সিস্টেম পৃথিবীর যেকোন মিলিটারির চেয়ে কয়েকশগুণ বেশি বুদ্ধিদীপ্ত এবং পাওয়ারফুল। এই প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা ক্যান্সার এবং যেকোন ধরনের বাহিরের ক্ষতিকারক বস্তু থেকে আমাদের রক্ষা করতে পারে। এই রোগ প্রতিরোধ ব্যবস্থা বা ডিফেন্স সিস্টেম খুবই কমপ্লেক্স। আমি এখানে এটা সবচেয়ে সিম্পল পদ্ধতিতে বর্ণনা করার চেষ্টা করছি…

ডিফেন্স সিস্টেম বা রোগ প্রতিরোধ ব্যবস্থার প্রথম বেরিয়ার হচ্ছে আপনার চামড়া বা স্কিন। ধরুন, স্কিন কেটে গেল; মানে প্রতিরক্ষা ব্যবস্থায় ছিদ্র! তখনই আশেপাশে থেকে ব্যাকটেরিয়াগুলো কাটা অংশে চলে আসবে এবং দ্রুত সংখ্যা বৃদ্ধি করতে থাকবে; সাধারণত প্রতি ২০ মিনিটে সংখ্যায় ডাবল হয়। তারপর হচ্ছে টিস্যুর গার্ড বা প্রহরী কোর্স “ম্যাক্রোফেজ” ওখানকার ব্যাকটেরিয়া গুলোকে মারার চেষ্টা করবে। একটা ম্যাক্রোফেজ বা প্রহরী কোষ একশরও বেশী জীবাণু মেরে ফেলতে পারে। বেশিরভাগ ছোটখাটো ইনজুরির ক্ষেত্রে টিস্যু ম্যাক্রোফেজই জীবাণু মেরে ফেলার জন্য যথেষ্ট। এটি জীবাণুকে তার বাহিরের আবরনের সাথে এটাচ করে তারপর গিলে ফেলে তারপর কোষের ভিতরের এনজাইম দিয়ে জীবাণুটাকে মেরে ফেলে। যদি ইনজুরিটা বেশি হয় এই ম্যাক্রোফেজ বা প্রহরী সেল যদি যথেষ্ট না হয় মারার জন্য তাহলে এই ম্যাক্রোফেজ বা প্রহরী সেল কিছু কেমিক্যাল রিলিজ করে যেগুলো পার্শ্ববর্তী রক্তনালী থেকে নিউট্রোফিল সহ আরও অন্যান্য সেলকে ইনজুরি সাইট বা যুদ্বক্ষেত্রে নিয়ে আসে। নিউট্রোফিল খুবই পাওয়ারফুল সেল, জীবাণুগুলোকে মারাত্মক ভাবে মেরে ফেলে সাথে সাথে শরীরের নিজস্ব কিছু সেলও নষ্ট হয়।নিউট্রোফিলও যদি যথেষ্ট না হয় অর্থাৎ ইনজুরিটা যদি অনেক বেশি হয় তাহলে কেমিক্যাল রিলিজ করার মাধ্যমে আরো নিউট্রোফিল এবং আরো ম্যাক্রোফেজ নিয়ে আসে ইনজুরি সাইটে বা যুদ্ধক্ষেত্রে।

যদি তাও যথেষ্ট না হয় তখন এই ডিফেন্স সিস্টেম বা প্রতিরোধ ব্যবস্থার মস্তিষ্ক একটিভ হয়ে যায়। কিছু সেল যেমন ডেনড্রাইটিক সেল বা ম্যাক্রোফেজ এই জীবাণুর কিছু অংশ তাদের সাথে সেট করে নিকটস্ত লসিকাগ্রন্থি তে নিয়ে যায়। এই যাত্রায় একদিনের মত সময় লাগে। তারপর সেখানে Helper T cell নামক কিছু সেলের কাছে এই জীবাণুর কিছু অংশ বা এন্টিজেন প্রদান করে তখন এই হেল্পার টি সেল যাদের সাথে এই এন্টিজেন টা খাপে খাপ মিলে সেই হেল্পার সেলগুলো খুব দ্রুত সংখ্যায় বাড়তে থাকে এবং লিম্ফ নোড বা লসিকাগ্রন্থির মধ্যস্থলে অবস্থিত বি সেলকে একটিভেট করে দেয়। বি সেল গুলো সংখ্যায় দ্রুত বাড়তে থাকে এবং কিছু মেমোরি বি সেল গ্রন্থিতে থেকে যায় বাকি বেশিরভাগ সেল যুদ্ধক্ষেত্রে/ইঞ্জুরি সাইটে চলে যায় এবং সারা শরীরে ছড়িয়ে পড়ে। এই বি সেল গুলো এন্টিজেন বা জীবাণুর কিছু অংশের বিরুদ্ধে এন্টিবডি তৈরি করে। এন্টিজেন এন্টিবডি হচ্ছে তালা-চাবির মত। এন্টিবডি এন্টিজেনকে চিহ্নিত করতে পারে এবং চিহ্নিত করার পরই এন্টিজেনসহ জীবাণুটিকে মেরে ফেলে। এন্টিবডি তৈরি হয়ে গেলে সহজেই যুদ্ধে জয় চলে আসে।

এভাবে অনেকগুলো সেলের টিম প্লের কারণে খেলায় জয় আসে। ইতোমধ্যেই লক্ষ লক্ষ নিজস্ব সেল মারা যায়। বড় কিছু নয়। খুব দ্রুতই সেই ক্ষতি পূরণ হয়ে যায়। যুদ্ধক্ষেত্রে বাকী থাকা যুদ্ধারা সুইসাইড করে, কারণ সেখানে থাকা নরমাল সেলের জন্য এরা ক্ষতিকর। কি দরকার আরো ক্ষতি করার। বাট কিছু মেমোরি বি সেল কিন্তু লিম্ফনোড বা লসিকা গ্রন্থিতে থেকে যায়, এগুলো পরবর্তীতে যদি আবার সেইম জীবাণু অ্যাটাক করে তাহলে তাদেরকে এমনভাবে মেরে ফেলে আপনি বলতেও পারবেন না আপনার কোন রোগ হয়ে গেছে। যেমন আপনার যদি কখনো চিকেন পক্স হয়ে থাকে পরবর্তীতে আপনি বসন্ত রোগীর সংস্পর্শে আসলেও আপনি বলতেও পারেন না যে আপনার শরীরে জীবাণু প্রবেশ করেছে। এই হলো মোটামুটিভাবে কিভাবে আমাদের ইমিউন সিস্টেম কাজ করে। এটা অনেক বেশি সিম্পল করা হয়েছে। এর মধ্যে আরও অনেক সেল এবং কেমিক্যালস পুরো প্রক্রিয়ায় জড়িত। প্রক্রিয়াটাও অনেক বেশি কমপ্লেক্স। সত্যিকার অর্থে জীব এবং জীবন যে কোন মেশিনারি বা কম্পিউটারের থেকে অনেক বেশি কমপ্লিকেটেড এবং কমপ্লেক্স। আমরা যদি সময় নিয়ে এগুলো বোঝার চেষ্টা করি তাহলে আমরা অসম্ভব আশ্চর্যান্বিত হব এবং সৃষ্টির অপার সৌন্দর্য উপলব্ধি করতে পারব।

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button