সেক্সোয়াল হেলথ

অনিয়মিত মাসিকঃ যা জানতেই হবে

মেয়েদের অনিয়মিত মাসিক খুবই সাধারণ সমস্যা। একটি নারী তার জীবনের কোন না কোন সময় অনিয়মিত মাসিক সমস্যায় ভুগে থাকেন। মাসিক অনিয়মিত বলতে আমরা যা বুঝি প্রতি মাসে একটি নির্দিষ্ট সময়ে সব মেয়েদের মাসিক হয় যদি এরকম হয় তাহলে আমরা সেটাকে বলি অনিয়মিত মাসিক। প্রথম জেনে নেই মাসিক বলতে আমরা কি বুঝি? নির্দিষ্ট সময়ে যোনিপথে অথবা তার মাসিকের রাস্তা দিয়ে রক্ত স্রাব বের হয়ে আসে সেটাই আমরা মাসিক বলে থাকি। এই মাসিক সাধারণত 28 দিন পর পর হয়ে থাকে এবং যখন মাসিক শুরু হয় তখন দুই থেকে 7 দিন পর্যন্ত স্থায়ী হয়। যদি আমি বললাম ২-৭ দিন এবং আরো বেশি হয় অথবা মাসিক বেশি দিন স্থায়ী হয় তখনই আমরা তাকে অনিয়মিত মাসিক বলে থাকি আমরা।

অনিয়মিত মাসিক একটি মেয়ের কি কি কারণে হতে পারে? যদি আমরা সাধারণ কারণ গুলো দেখতে চাই তাহলে দেখব যে কোন মেয়ে যদি হঠাৎ করে অতিরিক্ত ওজন কমিয়ে ফেলে অথবা বাড়িয়ে ফেলে সেটাও হতে পারে অনিয়মিত মাসিকের একটি কারণ। যদি কোন ডাক্তারের প্রেসক্রিপশন অথবা পরামর্শ ছাড়া যেকোনো ধরনের হরমোন ওষুধ সেবন করে তাহলে তার অনিয়মিত মাসিক হতে পারে। যারা জন্ম নিয়ন্ত্রণ করার জন্য ফাইল অথবা ওরাল কন্ট্রাসেপটিভ পিল থাকছেন তারা যদি হঠাৎ করে খাওয়ায় অনিয়ম করেন তাহলে সেটা অনিয়মিত মাসিকের কারণ হয়ে দাঁড়াতে পারে। আর এখনকার যুগে ইমার্জেন্সি কন্ট্রাসেপটিভ পিল বলে একটা পিল বাজারে সবাই ডাক্তারের পরামর্শ ছাড়াই নিয়ে থাকেন সেটাও এখন একটা মূল কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে অনিয়মিত মাসিকের। অনিয়মিত মাসিকের আরো কিছু কারণ আছে যেমন মেডিকেল প্রবলেম বলে থাকে যেমন পলিসিস্টিক অভারিয়ান দিসিজ এখানে ওভারি বা ডিম্বাশয় বড় হয়ে যায় সেরকম কোন অবস্থার সৃষ্টি হয় তাহলেও সে অনিয়মিত মাসিকের সমস্যার জন্য অনিয়মিত মাসিকের ভুগতে পারে।

সন্তান জন্মের সাথেও মাসিক অনিয়মিত হওয়ার সম্পর্ক আছে। কোন সন্তান জন্মের পরে আমরা সাধারণত বলে থাকেন যে নবাগত সন্তান অথবা নবজাতককে শুধুমাত্র মায়ের বুকের দুধ খাওয়ানো হয় তার বাচ্চাকে বুকের দুধ খাওয়ান তখন মায়ের মাসিক বন্ধ থাকতে পারে অথবা অনিয়মিত হতে পারে। কারো কারো ক্ষেত্রে এক বছরে মাসিক বন্ধ থাকে আবার কারো কারো ছয় থেকে আট মাস পর মাসিক হয়। কিন্তু অনিয়মিত হয় সেটাও ভয় পাওয়ার কিছুই নাই একসময় হয়ত ঠিক হয়ে যাবে। এছাড়াও এবরশন অথবা আমরা যেটাকে মেডিকেল টার্মিনেশন বলে থাকে এ ধরনের ছোটখাট প্রসিডিউর অথবা ছোটখাটো অপারেশনের পর মাসিক অনিয়মিত হতে পারে।

আমরা এখন জেনে নেই মাসিক অনিয়মিত হওয়ার ধরন কি কি আছে? যেমন একটি আপনাদের কারও কারও মাসিক সবসময় অনিয়মিত আরেকটি ধরন আছে যে কারণে মাসিক হঠাৎ করে অনিয়মিত হয়ে গেছে। যাদের মাসিক সবসময় অনিয়মিত তাদেরকে অবশ্যই আমি বলব যে বিশেষজ্ঞ ডাক্তারের কাছে গিয়ে দেখিয়ে ফেলুন কারণ সবসময় যাদের অনিয়মিত মাসিক তাদের মধ্যে সাধারণত দেখা যায় হরমোনাল কিছু সমস্যা থেকে থাকে সেই হরমোনাল সমস্যা যদি থেকে থাকে তাহলে সেই হরমোন সমস্যা টা যদি আমরা ওষুধের মাধ্যমে ঠিক করতে পারি তাহলে তার মাসিক পরবর্তীকালে নির্মিত হয়ে যাবে। এখন আসা যাক দ্বিতীয় ধরনের যাদের মাসিক সবসময় নিয়মিত কিন্তু হঠাৎ করে কোনো কারণে অনিয়মিত হয়ে গেল এদের জন্য আমার উপদেশ হচ্ছে যে হঠাৎ করে অনিয়মিত হলে আমাদেরকে একটু নিজেদের জীবন প্রণালী, জীবন যাত্রার মান এবং আমাদের যে কাজকর্ম সেগুলো আমাদের পেছনে ফিরে তাকিয়ে এনালাইসিস করতে হবে যেমন আমি প্রথমেই বলেছিলাম যে হঠাৎ করে যদি কেউ মোটা হয়ে যান অথবা হঠাৎ করে যদি কেউ শুকিয়ে যান অথবা যদি অতিরিক্ত মানসিক চাপে কেউ থাকেন বা কর্মক্ষেত্র যদি পরিবর্তন হয় অথবা পারিবারিক কোনো সমস্যা হয়ে থাকে সে সমস্ত কারণে মাসিক অনিয়মিত হতে পারে। তাহলে চিন্তার কিছুই নাই কারন এটা সাময়িক এবং খুব দ্রুতই মাসিকের সমস্যা ঠিক হয়ে যাবে। তবুও বলবো যে যে ধরনের মাসিকের সমস্যায় হোক না কেন অবশ্যই মাসিকের দিন থেকে সাত দিন যদি পার হয়ে যায় তাহলে অবশ্যই বিশেষজ্ঞ ডাক্তারের সাথে পরামর্শ করতে হবে। কারণ প্রজনন ক্ষমতা সমস্ত মেয়েরা আছেন অথবা রিপ্রোডাক্টিভ লাইফে যে সমস্ত মেয়েরা আছেন মাসিক অনিয়মিত হলে আমরা প্রথমে চিন্তা করি সেটা হচ্ছে প্রেগনেন্সি।

প্রেগনেন্সি কাঙ্খিত অনাকাঙ্ক্ষিত দুটোই হতে পারে যেটাই হোক না কেন আমাদের পৃথিবীতে আসার যে রাস্তা সেটা যদি আমরা নিরাপদ করতে চাই তাহলে অবশ্যই মাসিকের দিনগুলো আমাদের মনে রাখতে হবে এবং মাসিক অনিয়মিত হলে সাথে সাথে আমাদের ডাক্তারের পরামর্শ নিতে হবে। এজন্য আমাদের আরেকটা কথা মনে রাখতে হবে মাসিক অনিয়মিত হওয়ার আরো জীবনের দুটি পর্যায় আছে যেমন যখন মেয়েদের প্রথম মাসিক শুরু হয়। মাসিক শুরু হওয়ার সময় হচ্ছে 9 থেকে 13 বছর। এই সময় যখন মেয়েদের প্রথম মাসিক শুরু হয় প্রথম 2-3 বছর মেয়েদের মাসিক অনিয়মিত থাকে এবং এই অনিয়মিত মাসিক ধীরে ধীরে সময়ের সাথে সাথে ঠিক হয়ে যায় তবুও এই বয়সে মেয়েদের প্রতি আমার অনুরোধ থাকবে আপনার মেয়েদের মাসিকের সময় কখন হচ্ছে সবকিছু আপনার নিজে খেয়াল করুন। যদিও আমি বলছি সবই স্বাভাবিক তবুও একজন বিশেষজ্ঞ ডাক্তারের পরামর্শ নিলে জটিল রোগ থেকে হয়তো আপনার ছোট মেয়ে চাই সহজেই রেহায় পাবে। তাছাড়া টিনেজ প্রেগন্যান্সী অ্যাক্সিডেন্ট হতে পারে সে জন্যই আপনার বাচ্চাদের মাসিকের সময় গুলো আমাদেরকেই দেখভাল করতে হবে। এছাড়াও টিনএজ মেয়েদের খাবার জীবনযাপন সবকিছু আমাদের খেয়াল রাখতে হবে কারণ খাবার এবং জীবন যাপন অথবা লাইফ সেল আমরা যেটাকে বলে থাকি তার সাথে কিন্তু মাসিকের অনেক সম্পর্ক আছে।

তারপর আসে আমি মেয়েদের জীবনের শেষে অর্থাৎ মেনোপজ মাসিক বন্ধ হওয়ার দুই থেকে তিন বছর আগেও কিন্তু মাসিক অনিয়মিত হতে পারে। অনিয়মিত মাসিক স্বাভাবিক আমরা বলে থাকলেও সবার প্রতি আমাদের যে উপদেশ অথবা অনুরোধ থাকবে যখনই মাসিক অনিয়মিত হবে তখনই একজন বিশেষজ্ঞ ডাক্তারের কাছে এসে আপনার স্বাস্থ্য পরীক্ষা করিয়ে নিন। কারণ এই বয়সে অনিয়মিত মাসিক অনেক সময় অনাকাঙ্ক্ষিত প্রেগনেন্সি জন্য হতে পারে অথবা মেয়েদের প্রজনন অঙ্গে যে ক্যান্সারগুলো হয়ে থাকে তারও কিছু উপসর্গ হিসেবে দেখা দিতে পারে সব। মাসিক মেয়েদের জীবনে একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। সবসময় না হলেও এই অনিয়মিত মাসিক হলে বিশেষজ্ঞ ডাক্তারের সাথে আমাদের পরামর্শ করতে হবে তাহলেই প্রতিটা মেয়ের জীবনেই হবে নিরাপদ এবং নিশ্চিন্ত।

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button